মাদক চোরাচালান রোধে হিমশিম নিত্যনতুন কৌশল পাচারকারীদের

আল-আমিন :

দেশের সীমান্তে মাদক চোরাচালান রোধে হিমশিম অবস্থা তৈরি হয়েছে। নানা উপায়ে, নানা কৌশলে দেশে আসছে মাদক।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোর তৎপরতার মধ্যেও নিত্যনতুন কৌশল রপ্ত করছে চোরাকারবারিরা। পাচারকারীরা জর্দার কৌটা, বাঁশ ফুটো করে ও পানের মধ্যে করে নিয়ে আসছে মাদক। সীমান্তরক্ষীরা জনবল ও সময়ের অভাবে একসঙ্গে আসা অনেক বেশি ছোট ছোট পণ্য সবগুলো তল্লাশি চালাতে পারেন না।

শুধুমাত্র গোপন সংবাদ ও সোর্সের মাধ্যমে ছোট ছোট জিনিসগুলো থেকে বিভিন্ন মাদক জব্দ করা হয়।

অন্য চালানগুলো তারা ধরতে পারছে না। ভারতের সীমান্ত এলাকা দিয়ে আগে ফেনসিডিল আসতো বেশি।

কিন্তু, এখন ইয়াবা আসার মাত্রা বেড়েছে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবার সঙ্গে আসছে আইসও। এ ছাড়াও সীমান্ত এলাকার পাশাপাশি উপকূলকেও মাদক চোরাচালানে ব্যবহার করছে পাচারকারীরা।

গত ২৭শে অক্টোবর বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) ও ভারতের নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোর মধ্যে মাদক চোরাচালান রোধে ৭ম দ্বিপক্ষীয় সভায় বিষয়গুলো উঠে এসেছে। চোরাচালান ঠেকাতে দুই দেশের সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে দুই দেশ একমত হয়েছে।

পাশাপাশি বাংলাদেশের ডিএনসি’র পক্ষ থেকে ভারতের এনসিবিকে জানানো হয়েছে যে, মাদক চোরাচালান রোধে শুধু ভারত নয় সঙ্গে মিয়ানমারকেও রাখতে হবে। কারণ মিয়ানমারের সঙ্গে ভারতেরও সীমান্ত থাকার পাশাপাশি বাংলাদেশেরও বড় সীমান্ত রয়েছে। ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগ ছাড়াও চোরাচালান রোধ করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের প্রস্তাবে ভারতের এনসিবি কোনো সংকোচ ছাড়াই সায় দিয়েছে এবং একত্রে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে।

পাশাপাশি তারা প্রত্যেক ৬ মাস পর পর দ্বিপক্ষীয় সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দীর্ঘ ২ বছর পর ভার্চ্যুয়াল এ সভায় ডিএনসি’র পক্ষ থেকে ১২ সদস্যের দলের নেতৃত্ব দেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক মো. আব্দুস সবুর মণ্ডল। আর ভারতের নারকোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরোর (এনসিবি) ৮ সদস্যের নেতৃত্ব দেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক শ্রী সত্য নারায়ণ প্রধান। সভায় ইয়াবা পাচারের সীমান্তে দুই নতুন রুটকে চিহ্নিত করা হয়।

এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) কুসুম দেওয়ান জানান, ‘করোনার কারণে দুই দেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি সভা করা সম্ভব হয়নি। সপ্তম ভার্চ্যুয়াল মিটিংয়ে মাদক চোরাচালানরোধে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সেগুলো বাস্তবায়নে দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করবে।’

ডিএনসি ও ভার্চ্যুয়াল সভায় যোগদানকারী একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তে দুই দেশের মাদক চোরাচালান নিয়ে দুই পক্ষই অসন্তুষ্ট হয়েছে। এ কারণে তারা নজরদারি বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন। সীমান্ত এলাকায় যেসব মোবাইল টাওয়ার রয়েছে সেখানে বিভিন্ন সিম ব্যবহার করে পাচারকারীরা মাদক চোরাচালান করছে।

সূত্র জানায়, ভারতের এনসিবি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ভারতের সীমান্ত থেকে যেসব চোরাকারবারিরা বাংলাদেশের ইয়াবা নিয়ে যায় তারা ওই সব ইয়াবা মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকা থেকে নিয়ে এসে ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গের রুট ব্যবহার করে বাংলাদেশে পাচার করে।

তারা দাবি করেছে যে, সীমান্তে তাদের কোনো ইয়াবা কারখানা নেই। এ চক্রকে দমনে তারা মাঠে কাজ করছে। ইতিমধ্যে তারা অনেককে গ্রেপ্তার করেছে। তবে বাংলাদেশের ডিএনসি’র পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, দেশের দুই রুট দিয়ে প্রবেশ করছে ইয়াবা। সেই দুই রুট হচ্ছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার তারাপুর এলাকা এবং কুষ্টিয়ার রামকৃষ্ণপুর ও প্রাগপুর এলাকা। ওই রুটে দুই দেশের পক্ষ থেকে নজরদারি বাড়ানোর জন্য উভয় পক্ষ একমত পোষণ করেন।

সূত্র জানায়, আলোচনায় সীমান্ত এলাকায় যে অবৈধ  মোবাইলের সিম দিয়ে মাদক বাণিজ্য চলছে সেটি উভয় পক্ষ সামনে এনেছে। তারা নিজ নিজ দেশের সীমান্ত এলাকায়  যেখানে মোবাইল টাওয়ার বেশি সেই এলাকায় নজরদারি এবং সন্দেহভাজনদের পণ্য তল্লাশি ও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য জোর তাগিদ দেন। এতে চোরাচালান অনেকটা রোধ হবে। এ ছাড়াও সীমান্ত এলাকায় যেসব ছোট ছোট পণ্য রপ্তানি হয়ে থাকে সেগুলো সময় নিয়ে তল্লাশি করা এবং দুই দেশের মাদক ব্যবসায়ীদের আপডেট তথ্য বিনিময়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।